কিশোর সেনাপতি ১৭ বছর বয়স্ক উসামা (রা)
রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত উসামা (রা) কে সেনাপতি করে রোমানদের বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে শাম দেশে অভিযানের নির্দেশ দেন। সেনাবাহিনী মদীনা ত্যাগের পূর্বেই নবী করীম (সা) ইন্তিকাল করেন। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান স্থগিত হয়।
এরপর মুসলিম জাহানের প্রথম খলীফা নির্বাচিত হন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা)। খলীফার দায়িত্ব গ্রহণের এক সপ্তাহ পরই সার্বিক বিপর্যয় বিবেচনা করে এ অভিযান চালানো সে সময় ঠিক হবে কিনা আর হলেও ১৭ বছর বয়স্ক উসামা ইবনে যায়িদকে সেনাপতির পদে বহাল রাখা ঠিক হবে কিনা এ নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠলো। হযরত উমর (রা), আবু ওবায়দা (রা) হযরত খালিদের নেতৃত্বে বাহিনী পাঠাবার পরামর্শ দেন। হযরত আলী ও উমর (রা) এর মত বিচক্ষণ ব্যাক্তিগণ আপাতত অভিযান প্রয়োজনে স্থগিত রাখার পরামর্শও দেন। আর যদি সৈন্য পাঠাতে হয় তবে সেনাপতি পরিবর্তন করা জরুরী।
হযরত আবু বকর (রা) রাগে ফেটে পড়লেন। হযরত উমরের দাড়ি মুষ্ঠিবদ্ধ করে ধরে চিৎকার করে বললেন, “হে উমর! ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তুমি কঠোর ছিলে আর আজ তুমি বুজদেল হয়ে পড়ছ।” খলীফাতুল মুসলিমীন বললেন, “আমি কি ঐ ব্যাক্তির হাত থেকে ঝান্ডা কেড়ে নিবো, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা) যার হাতে ঝান্ডা তুলে দিয়েছেন? আল্লাহর কসম! আমার লাশ যদি পশু-পাখি ঠুকরে খায় তবু আল্লাহর রাসূলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমি এক চুল পিছপা হবো না। তোমরা যদি উসামা বিন যায়িদের নেতৃত্বে যুদ্ধে বের না হও তবে খেলাফতের দায়িত্ব তোমাদের উপর রইলো, আমি যুদ্ধে রওয়ানা হলাম।” সকলে নীরব হয়ে গেলেন।
উসামা বিন যায়িদের (রা) বাহিনী রওয়ানা হলে খলীফা আবু বকর (রা) সেনাপতির ঘোড়ার সাথে পায়ে হেঁটে সামনে চললেন- ও হযরত উমর (রা) কে নতুন খলীফাকে পরামর্শ দানের প্রয়োজনে রেখে যাওয়ার জন্য বললেন। হযরত উসামা (রা) খলীফার আবেদন মঞ্জুর করে হযরত উমর (রা) কে তাঁর বাহিনী থেকে মদীনায় রেখে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেন।
সুবহানআল্লাহ!
রাসূল (সা) এর সিদ্ধান্ত ও তাঁর নিয়োগকৃত কিশোর সেনাপতির প্রতি সাইয়্যেদুনা আবু বকর (রা) এর শ্রদ্ধাবোধ ও আপোষহীনতা সমস্ত উম্মতের জন্য এক বিরল দৃষ্টান্ত।
অতঃপর খলীফা আবু বকর (রা) উসামার (রা) বাহিনীকে নসীহত করে বললেন, “কারো সাথে ওয়াদা খেলাফ করবেনা। স্বীয় অন্তরকে হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে পবিত্র রাখবে। সাবধান! লাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্তন ও বিকৃত করা হারাম। শিশু-বৃদ্ধ ও মহিলাদেরকে হত্যা করবে না। ফলদার ও ছায়াদার বৃক্ষ ধ্বংস করবেনা। দুনিয়াত্যাগী রাহেব ও সন্ন্যাসীদেরকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দিবে। যুদ্ধে বাধাদানকারী রোমক সৈন্যদের হত্যা করবে। তোমরা এগিয়ে যাও- আল্লাহ তোমাদের সহায়।”
-(তারীখুল খোলাফা, তবারী)
মাত্র ৪০ দিনের মাথায় হযরত উসামার বাহিনী বিজয়ী হয়ে মদীনায় ফিরে আসেন।
(সংগৃহীত)